এক
মাছি উড়ছে ভনভন করে,ছেড়া-ফাটা জামাকাপড়,ধুলো ময়লায় জর্জরিত একটা নোংরা শরীর,সে একটা পাগলী, মোড়ের মাথায় যে বটগাছটা ,তার ঠিক তলায় সে পড়ে থাকত,কেউ নজর করত না।
খুব পেছনে না লাগলে ,পাগলীটা বেশ শান্ত থাকত,নিজের মত। কেউ কিছু দিলে খেত আর না দিলে তার মাটির হাঁড়িতে খেয়ালী পোলাও পাকাত। তবে ছেলেপুলের মাত্রারিক্ত “খিল্লির” চোটে,পাগলীটা এক একদিন সত্যিকারের পাগলী হয়ে উঠত যেন, তখন তার মুখের বুলির চোটে ,পিতৃ-পুরুষের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত।।
দুই
আজ বোধহয় সেরকম কিছু একটা ঘটে থাকবে,খুব গালিগালাজ করছে পাগলিটা,রবিবারের সকালটা মাটি করে দিছে,ভাবলাম পাড়ার সম্মানীয় মানুষ হিসাবে এর প্রতিবাদ করা দরকার,ধমকে দিতে হবে পাগলীটাকে ,সেই উদ্দেশেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম,থমকে গেলাম।।
দেখলাম পাগলীটাকে ঘিরে বেশ ভিড় জমেছে,আরে ওটা কি?
দেখলাম,পাগলিটা বুকের কাছে জাপটে ধরে আছে একটা আরও নোংরা পুঁটলি,ভালো করে খেয়াল করলাম,সেটা একটা মানব শিশু,দিব্বি হাত পা নাড়ছে।
কৌতুহল নিবৃত্ত করলেন,পাড়ার আর এক সম্মানীয় মানুষ ,রবি বাবূ,আমার মুখের অবাক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বল্লেনঃ”আরে মশাই বুঝলেন না,খুচরো পাপ,মাগিটা কাল রাতে বাচ্চা বিয়েছে,এখনো নাড়ি লেগে আছে,কার না কার পাপ,এসব আপদ মরেও না,পাড়াটাকে নোংরা করে রেখেছে,আজ এ পাড়া ছাড়া করতে হবে ”।
তিন
ইতিমধ্যে দেখলাম,পাড়ার নবীন সদস্যদের এবারে উৎসাহ খুব বেশী,বাঁশের খোচানি তো ছিলই,তার সাথে পাগলী আর তার সেই নোংরা জারজটার উপর ঢিল ও পড়তে লাগল,পাগলী শুচিকরন দৃশ্য সবাই বেশ উপভোগ করে দেখতে লাগল,আমিও ।।
হঠাত মালতি মাসি কে দেখলাম,ভিড় কে অগ্রাহ্য করে পাগলীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,সে এই পাড়াতেই বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে,বহু বছর ধরে।
বোধহয় বয়সের ভীমরতির কারনেই সে একা হাত তুলে ছেলেপুলে কে থামাতে লাগল,রীতিমতো ঝগড়া বেধে গেল, একদিকে সুশিক্ষিত সভ্য রুচিশীল সমাজ,আর একদিকে মালতি মাসি আর সেই পাগলীটা।
এত চিৎকারের মধ্যেও মালতি মাসির একটা আর্তনাদ আজও আমার কানে বাজেঃ
“ওরে ভদ্র মানুষের লেখাপড়া যানা ব্যাটারা,তোরা একটা পাগলীকেও রেহাই দিলিনা”
বিশ্বাস করুন,একটা জোরাল চড় অনুভব করলাম নিজের অস্তিত্তের ওপরে,চলে এলাম ওখান থেকে ।
আর কোনদিন পাগলীটাকে দেখিনি পাড়াতে,মালতি মাসি তাকে বাড়ী নিয়ে গেছিল কিম্বা পাড়ার লোক নির্বাসন দিয়েছিলো,জানি না,বোধহয় জানতে চাই ও না, শুধু এটুকু জানি,যে অনেক ডিগ্রী থাকলেও,শিক্ষা টা আমাদের বাকিই থেকে গেছে,মালতি মাসিরা অনেকটা এগিয়ে গেছে সে জায়গায়।।