দেখতে দেখতে সেই দিনটা এসেই গেল, যেটার জন্য আমরা প্রস্তুত তো ছিলাম,কিন্তু অপেক্ষায় ছিলাম না.........কলেজের শেষ দিন।।
সকাল থেকেই আজ আকাশটা খুব উজ্জ্বল,আর সারি সারি শাড়ী-পাঞ্জাবীর ভিড়টাও,কিন্তু মুখগুলো ঠিক ততটাই অন্ধকার...... কাল থেকে আর সবার সাথে সবার দেখা হবেনা রোজ রোজ,হয়ত আর দেখাই হবেনা।।
তাই Group hug,selfie, hi5 ,inappropriate jokes-এ সাময়িক হাসিতে ফেটে পড়া মুখগুলোর মাঝে, ভিজে চোখগুলো বারবার ক্যামেরাতে ধরা দিচ্ছিল।।
সকাল থেকে ঢালাও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও, আজ তাতে কারো মন ছিল না,বরং ক্যান্টিনের আধপোড়া ঘুগনি-পরটা,কিম্বা আরারুট ঠাসা পকড়া,আজ অমৃত।। আজ পকড়ার প্লেটে পরিমানটা বেশী থাকেলও,অন্যদিনের মত বুনো কাড়াকাড়িটা ছিলনা,হাতগুলো আজ বড্ড স্থির,উচ্ছ্বাসের জায়গায় সেখানে স্থান নিয়েছে discipline,হয়ত আগামী দিনগুলোর আশঙ্কায়।।
কিছু ভিড় জটলা করছিল খেলার মাঠে,বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নিচ্ছিল শেষ একবার,খুঁজে পেতে চাইছিল সেই ঘামঝরা বিকেলগুলোকে,জেতার আনন্দের উষ্ণ আলিঙ্গন কিম্বা হেরে গিয়ে বাচ্চাদের মত ঝগড়া-হাতাহাতি......তাদের চোখের ঝাপসা দৃষ্টিগুলো বারবার জানান দিচ্ছিল,সেই হাসি-কান্না-বাওয়াল মাখা বিকেলগুলো আজ শুধুই স্মৃতির ছায়াছবি।।
একদল ভিড় করেছিল বাথরুমগুলোতে............ নাহ,আজ আর পিরিয়ড বাঙ্ক করে ধরা পড়ার ভয়টা ছিলনা,তাই অন্যদিনের মত তাস,সবার মুখ ঘুরে এক সিগারেটের স্বাদ টাও আজ জমছিল না,সবেতেই কেমন একটা বিসর্জনের গন্ধ......তাই অন্যদিনের খিস্তি-খেউড়ের বদলে , বন্ধ দেয়ালগুলোর মাঝে কানপাতলেই,শোনা যাচ্ছিল চাপা দীর্ঘশ্বাস।।
Couple-দের ভিড়টায় কান্নাকাটির পরিমানটা একটু বেশী,অন্যদিন হলে দু-চারটে খিস্তি কিম্বা sarcastic jokes ঠিকই ছুটে আসতো ওদের দিকে,কিন্তু আজ ব্যপারটা অন্যরকম।
কেউ কেউ অনেক দূরে চাকরি পেয়েছে,কারো বাড়ী আবার অনেক দূরে,তাই কলেজের প্রাচীরের বাইরেটার “কালকের” কথা ভেবে ,ধরে থাকা হাতগুলোর বাঁধন আজ অনেক বেশী দৃঢ়, চোখের জলের উষ্ণতায় প্রতিজ্ঞার ইঙ্গিত ।।
এই ভিড়গুলোর মাঝে কিছু কিছু চোখ কিন্তু একলা ঘুরছিল,খুজে চলছিল তাদের crush কে,দূর থেকে দেখে নিচ্ছিল আর একবার,হয়ত শেষবারের মত।।
আমার চোখও খুঁজছিল তাকে। দেখলাম বাসন্তী রঙ্গের একটা শাড়ী পরে এসছে সে,খুব কাঁদছিল।
ইচ্ছে হল, গিয়ে সান্ত্বনা দি,কিন্ত বরাবরের মত পাশের জায়গাটা আগের থেকেই ভরাট ছিল,ছিল সান্ত্বনা দেওয়ার হাত টাও ।অগত্যা অপেক্ষায় রইলাম বরাবরের মত,যাওয়ার আগে শেষ একবার যদি ফিরে তাকায়,একবার যদি হাসিমুখে বলে আবার দেখা হবে তো?
কিন্তু না,জীবনটা তো আর হিন্দি সিনেমা নয়,তাই ঠাণ্ডা হাওয়াও চলল না আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও বাজল না,ওদের গাড়িটা ধোঁয়া ছেড়ে বেরিয়ে গেল।।
আমারও যাওয়ার সময় হল, আর একবার ফিরে তাকালাম,সেই গেট ,সেই দেওয়াল সেই দরজাগুলোর দিকে,সেই হাসিমাখা মুখগুলোর দিকে,এই চারটে বছরে যারা জীবনের সব থেকে বেশী আপন হয়ে উঠেছিল, তারা যেন কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল “আবার আসিস,বছরে অন্তত একবার আমরা আবার এক হব”,আমিও সায় দিলাম “আসব”,কিন্তু আমরা দু-পক্ষই মনে মনে জানতাম,সেটা কতটা অবাস্তব..................।।