<<<<<<<<<< হেডলাইনঃ জনৈক মানসিক-ভারসাম্যহীন ব্যক্তির চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু >>>>>>>>>>
সাত-সকালে পাড়ার মোড়ে,চা এর ঠেক.....জনৈক রামবাবু এবং শ্যামবাবুর আড্ডা.....................।।
রামবাবুঃ “রাজ্য জুড়ে এ কি শুরু হল বলুনতো, মানুষটাকে গরুছাগলের মত পিটিয়ে মেরে দিল”।
শ্যামবাবুঃ “আরে ধুর মশাই ছাড়ুনতো, সুস্থ্-সবল মানুষগুলোকে দিনে দুপুরে হাপিস করে দিচ্ছে,আর ও শালাতো একটা পাগল”।।
রামবাবুঃ “সেটা অবশ্য খারাপ বলেননি আপনি,যাকগে আপনি বাচলে বাপের নাম......কইরে হরি,আমার চা-টা দে বাবা,এরপরে দেরী করে বাজারে গেলে বাড়ির লোক আমাকে না গণপিটুনি দিয়ে দেয় .................”।।
---------------------------------------------------------------------
<<<<<<<< শীতের দুপুরে পিঠ লাগানো আমেজে সিগারেটের মৌতাত ,সবুজ গালিচায় গা-এলানো হোক-কলরব >>>>>>>>>
“বলছি এই মৃত্যুটাকে নিয়ে আমরা আর একবার পথে নামতে পারিনা”?
“সব কিছুকে নিয়ে বারবার পথে নামব নাকি,বারবার এক অস্ত্র প্রয়োগ করলে,সেটা প্রাসঙ্গিকতা হারায়.........সামনে সেমেস্টার,ওটাতে মন দে”।
“তাহলে open kiss আন্দলোনের খুব প্রয়োজন ছিল কি”??
“যেটা বুঝিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না,একটা সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হাত দেওয়া আর একটা সামান্য পাগলের মৃত্যু,দুটো এক নয়,আজ নাহলে কাল ও তো মরতই,বাসে কিম্বা ট্রেনেই কাটা পড়ত হয়ত……
তাই ফালতু বাওয়াল না দিয়ে যা ক্লাসে যা……………”
-----------------------------------------------------------------------
<<<<<<< রাজনৈতিক-সামাজিক-মানবিক অনেক বাধার প্রাচীর পেরিয়ে,পুলিস কতৃক অভিযুক্তদের নামের তালিকা প্রকাশ >>>>>>>>
নাম প্রকাশ পাওয়া দুই ছাত্রের অভিভাবকদের কথোপকথন......
“দাদা ছেলেগুলোর কেরিয়ারে কোনো দাগ লেগে যাবেনাতো? মাথা গরম করে কি যে করে বসল,ভয়েতো আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে”।
“আহহহ বিকাশ,তুমি বড্ড বেশী ভয় পাচ্ছ, ওদের সিনিয়র টিচারদের সাথে কথা হয়ে গেছে,চাপের কিচ্ছু নেই,পুলিস-প্রসাশন সাথেই আছে, সবাই সংবেদনশীল,এতগুলো মেধাবী ছাত্রকে তো আর বানের জলে ভাসিয়ে দিতে পারেনা ওরা,একটা সামান্য পাগলের জন্য.........।।”
পাশের ঘর থেকে নারী-কণ্ঠ ফুঁপিয়ে ওঠে, “মুখপোড়া আর মরার জায়গা পেলিনা, আমাদের ছেলেগুলোর কাল হয়ে কাল হয়ে এলি,ঠাকুর একটু দেখো আমাদের ছেলেপুলেকে,ওদের দোষ নিও না......”।।
-----------------------------------------------------------------------------
<<<<<<< এক অত্যন্ত পপুলার সংবাদ-পত্রের কর্পোরেট অফিস,পরের দিনের হেডলাইন খোঁজার চরম কর্মব্যস্ততা >>>>>>>>>>>
“স্যার, বলছি কাল কি সামনের পাতায় ঐ গনপিটুনির কভারেজটা রাখব”??
তুমিও কি পাগল হলে নাকি সামন্ত?পাবলিক খাচ্ছেনা সেটা দেখছ না?ওটাকে ভেতরের পাতায় চালান দাও......।।
-------------------------------------------------------------------------------
<<<<<<< অচিনপুর গ্রাম,ভাঙ্গাচোরা একটা কুঁড়ের সামনে আজ অনেক বড় বড় লোকের ভিড় >>>>>>
“দেখ রুকসানা বিবি, যা হওয়ার সেতো,হয়েই গেছে,আর এই নিয়ে জলঘোলা করে লাভ কি, যে যাওয়ার সেতো চলে গেল,কিন্তু তোমাদেরও তো খেয়ে বাঁচতে হবে নাকি,এই যে বাবুদের দেখছ,এনারা কলকেতার সব বড় বড় বাবু হন,এদের সাথে আমাদের সব কথা হয়ে গেছে,তোমাকে মোটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ,ছেলেপুলে নিয়ে ঘর কর তুমি,এসব ফালতু ঝামেলায় জড়িও না,বরং ওদের ভালভাবে মানুষ কর, আমরা বাকিটা সব সামলে নেব,তুমি শুধু মুখ খুলো না বাইরে”।
দু-মাসের বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রুকসানা,তাঁর বুক প্রতিবাদী হলেও,পেটের ক্ষুধায় মুখ নীরব থাকে,পাশ থেকে জবাব আসে, “ও আবার কি বলবে বাবারা,আপনারা,মাই-বাপ,আপনারা ওদের যা ভালো হয় তাই করেন,সে আবাগীর ব্যাটা বেঁচে থাকতে শান্তি দেয়নি,মরে গিয়েও হাড় জালাচ্ছে...”।
ডুকরে কেঁদে ওঠে রুকসানা,স্বল্প জায়গার অল্প পরিসরে অনভ্যস্ত কলকেতা বাবুদের বিরক্তি বাড়তে থাকে।।
-------------------------------------------------------------------------------
<<<<<<<<< স্বর্গ.......সর্বশক্তিমান ইশ্বর-আল্লার অবাধ বিচরণ-ক্ষেত্র >>>>>>>
ইশ্বরঃ “কিরে দেখছিসতো,তুই শুধু শুধু কাঁদছিলি তোকে দুম করে ডেকে নিলাম বলে,দেখ নিচে তাকিয়ে দেখ,কেউ তোকে ভালবাসেনা,এমনকি তোর মা-বাপ বউ কেউ না, আমি তো তবু ভালোবেসে তোকে চরণে ঠাই দিয়েছি”।
হঠাত ঈশ্বর পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলেন,সেই পাগল,তাঁর সিঙ্ঘাসনের উঠে বসে,তার জাদু-দন্ড নিয়ে খেলা আরম্ভ করে দিয়েছে......
হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন ঈশ্বরঃ “এই কে কোথায় আছিস,এটাকে বেঁধে নিয়ে যা এখান থেকে,শালা পাগল,একটু লাই দিয়েছি কি মাথায় উঠে বসেছে,হাত পা বেঁধে ফেলে রাখ আঁধার-কুঠুরিতে,জব্দ হবে...”
যমদূতেরা এগিয়ে যায় পাগলের দিকে , হি হি করে হাঁসতে থাকে পাগল,ঠিক আগের মতই.........।।
