পাতুরি

08:22


                                                               


*** এক ***

“মার শালাকে, একদম ছাড়বিনা,সকাল সকাল চুরি করতে চলে এসেছে,এত বড় সাহস”।।

“ বাঁধ বাঁধ ওটাকে শক্ত করে গাছের সাথে,আজকেই ওর চুরি করে খাওয়ার সাধ জন্মের মত ঘুচিয়ে দি “।।

“বলছি কি,পুলিস আসার পর ওদের হাতে তুলে দিলে ভালো হত না? মানে এভাবে মারধোরের ব্যাপারটা কি ঠিক ? “

“আপনি থামুন তো মশাই , পুলিস কি করবে হ্যাঁ? সেই তো দুদিন থানাতে নিয়ে গিয়ে বিনামুল্যে মামাবাড়ির  আদর খাইয়ে ছেড়ে দেবে ,ওসব চলবেনা ,যা করার আমাদের ই করতে হবে,উচিত শিক্ষে দিতে হবে,যাতে  পাড়ার মধ্যে এসব রোগ ছড়িয়ে পরতে না পারে “।।
“তুমি ছেড়ে দাও কাকু,ও শালাকে আমরাই দেখে নিচ্ছি,কিরে শালা,আর করবি চুরি”?

হঠাৎ একটা প্রচণ্ড আর্তচিৎকার ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে ,সেই ছেলেটার ।
যাকে বাঁধা হয়েছিল একটা বট গাছে শক্ত করে ,যাতে সে পালিয়ে না যেতে পারে,সে চোর কিনা,তাই... তবে কি চুরি করেছিল বা করতে এসছিল ,সেটা জানা যায়নি, আর জানতে কেউ আগ্রহী ও ছিলনা,তাকে ঘিরে রবিবারের ভিড়টার মধ্যে সমাজ-শোধনকারী মানুষের সংখ্যাটাই বড্ড বেশী ছিল ।।

তবে এবারের বাঁশের বাড়িটা বেশ জোরেই হয়ে গেছিলো মাথায় ,ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটেছিল,নেমে এসছিল ছেলেটার দুগাল বেয়ে । না খেতে পাওয়া,শীর্ণ শরীর,এতো ভারি খাওয়ার সহ্য করবে কি করে। এক পাশে হেলে পড়েছিল শরীরটা,কিন্তু হাতের মুঠোটায় ধরা একগাছা কলাপাতা সে কিন্তু আলগা করেনি এক মুহূর্তের জন্যও ।।

“তোদের সব ব্যাপারটাই বেশী বাড়াবাড়ি,অতো জোরে কেউ মারে ?? ”

“ওহহ শালা এখন আমাদের দোষ হয়ে গেল? আর নিজেরা যে চেপে বেঁধে রেখেছিলে,দম বন্ধ হয়েই তো লড়কে গেল মালটা”।

“আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করিসনা তোরা,বড়বাবুকে খবর দিয়েছি ,উনি আসছেন ,সব মেনেজ করে দেবেন”।

পুলিস আসার আগেই রবিবারের ভিড়টা ফাঁকা হতে শুরু করেছিল । বাড়ীতে ভালো মন্দ রান্না হয়েছে ,কি দরকার ফালতু ঝামেলাতে জড়িয়ে।।

ডেও পিঁপড়ে ধরতে শুরু করেছিল ,ছেলেটার লাশটাতে।।



      

 ******  দুই  ******

“মা মা মা” ??

“ কি হয়েছে রে,উফফ বাড়ি মাথায় করে তুললি যে,
ওমা এত বড় ইলিশ মাছ,কোথাই পেলি রে ,চুরি টুরি করলি নাকি,সত্যি করে বল,
ও মাছ কিন্তু আমি খাবনা তাহলে, এই মাথার দিব্যি দিলাম”।।

“উফফ মা তুমি পারো বটে ,বাপ মরা গরীবের ছেলে বলে কি ইলিশ মাছ খেতেও পারেনা কোনোদিন?
আজ সকালে কলোনির ফুটবল টুর্নামেন্ট ছিলনা,তাতে আমাদের টিম জিতেছে ,আর সবাইকে ৫০০ টাকা করে দিয়েছে প্রাইজ ।।”

“আর তুমি অমনি সেই টাকায় মাছ নিয়ে নাছতে নাছতে বাড়ি চলে এলে,বাদর ছেলে একটা ,কতবার না তোকে বলেছি ,বাবা চলে গেছে,এরকম দুমদাম খরচা করার দিন আর নেই আমাদের”।।

“উফফ মা ছাড়ো না,আজ একটু জমিয়ে রাঁধো তো ,কতদিন রবিবারের দুপুরে জমিয়ে খাইনি,তুমি এটার পাতুরি করো বরং,একদম জমে যাবে”।।

“রক্ষে কর বাবা,আবার পাতুরি খাবেন নবাব সাহেব ,ওত হাঙ্গামাতে আমি নেই,মুচমুচে করে ভেজে দিচ্ছি, খেয়ে নে,পাতুরিতে আবার কলাপাতা লাগবে,এখন আমি কলাপাতা আনতে ছুটবো তোর জন্য” ??

“ওহহ এই বেপার,কুছ পরোয়া নেই,আমি যাব আর নিয়ে চলে আসব”।।
দৌড়ে বেরিয়ে গেছিল ছেলেটা......... “ওরে শোন শোন, কারো বাগানে আবার ঢুকে পড়িসনা যেন”,
“একটা কলাপাতা নিলে কেউ কিছু বলবেনা মা,আমি এই গেলাম আর এলাম,তুমি সব রেডি করে রাখ”  ।।
“একটা কথা যদি শোনে এই ছেলে” ,গজগজ করতে করতে মাছটা কাটতে বসে পড়েছিল ছেলেটার মা,
“নাহ মাছটা কিন্তু খাসা এনেছে ,কতদিন পরে যে এই মাছ ঘরে এল” .....................।।



  *** তিন ***
 আজ অনেকদিন পর মনটা খুব ফুরফুরে হারানের ,তার গাড়িতে কাস্টোমার চেপেছে যে বহুদিন পর,
যেচে তো কেউ তার গাড়িতে ছাপতে চায়না।
শক্ত করে দড়িটা বাধছিল হারান ডোম ,অনেকদুর যেতে হবে ,রাস্তা ভালো না,লাশটা গড়িয়ে যেতে পারে।
প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত হারানের এই কাজে,কিন্তু এখন পেটের খিদেটা,লাশের গন্ধটাকে হারিয়ে দিয়েছে  অনেকদিন,তাই থানার মেজবাবু যখন সকালে ফোনটা করেছিল তাকে,তখনই হারান বুঝেছিল ,আজ কপালে ভালো ইনকাম লেখা আছে।
আসার সময় সে দেখে এসছে ব্রিজের ওপর  একটা লোক বেশ বড় বড় ইলিশ নিয়ে বসে আছে।
ফেরার সময় আরও দাম একটু কমে যাবে নিশ্চয়ই,বুক পকেটে রাখা টাকাটায় হাত বুলিয়ে নিল সে একবার ,আহ কতদিন যে ছেলে-বউটার মুখে ইলিশ দিতে পারেনি।।
ঐ দেখো আবার বৃষ্টি শুরু হল যে, উঠে পড়ে হারান,মর্গটা বেশ অনেকটা দূর ,জোরে গাড়ী চালাতে হবে তাকে ............।।       

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images