সিগারেট
07:07এক
কিছুটা আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে,মাটি থেকে উঠে আসা সোঁদা গন্ধটা সিগারেটের গন্ধের সাথে মিশে পরিবেশটাকে আরো ভারি করে তুলেছে যেন। বটগাছের তলার বেঞ্চটায় দুটো শরীর বসে আছে,একটা ছেলে আর একটা মেয়ে,কিন্তু তারা কোন কথা বলছে না,শুধু তাদের হাত দুটো ধরা,মেয়েটার চোখ দুটো ভেজা,অনেক কথা বলতে চাইছে বোধহয়...ছেলেটার দৃষ্টি শূন্য,কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে...তাদের এই নীরব কথোপকথনের একমাত্র সাক্ষী একটা আধপোড়া জলন্ত সিগারেট,ছেলেটার আঙুলের ফাঁকে।। “সিগারেট টা ফেল এবারে,আঙ্গুল পোড়াবিযে”,সুরাজ এর ডাকে হুঁশ ফেরে রাহুল এর,সত্যি তো,ফিল্টার অব্ধি এসে গেছে আগুন। “কি ভাবছিলি এতো,নিউ প্রোজেক্ট ম্যানেজার খুব চাপের নাকি”? হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে ,অল্প হেসে বেরিয়ে পড়ল রাহুল ,নাহ আজ আর কাজে মন বসবে না,পালাতে হবে অফিস থেকে।
দুই
বাইরে অন্ধকার নেমেছে আর তার সঙ্গে আবার বৃষ্টি,ফ্লাটের দরজা খুলে তড়িঘড়ি ভেজা জামা-কাপড় গুলো বদলে নেয় রাহুল।রুটিনমাফিক জীবন ,বাঙ্গালোর নিবাসী পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার রাহুল সেন,সকালে মাসি রান্না করে দিয়ে গেছে,গরম করে নিতে হবে রাতের খাবার গুলো । সকালে অফিস আর রাতে ফ্ল্যাটে ফিরে ঘুম এই দুটোর মাঝে তার জীবনে বৈচিত্র্য বলতে এই বৃষ্টিগুলো আর নিরা। রাত সাড়ে নটার দিকে মা এর সেই একঘেয়ে ফোন টা আসবে “এবারে বিয়ে টা কর বাবা,আর কতদিন এভাবে চলবে ,আমাদেরও তো বয়স বাড়ছে ইত্যদি ইত্যদি ” এখন আর কথা গুলো ঠিক করে শোনেও না সে।। বৃষ্টি টা একটু ধরেছে,মাটি থেকে সোঁদা গন্ধটা টা আবার আসছে যেন, একটা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে,বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে,বুক ভরে একবার নিশ্বাস নিয়ে নিল,সেই বিকেল সেই বটগাছ আর হ্যাঁ নিরা,নিরার শরীরের গন্ধ পেল সে। এটা নতুন নয়,যখনই বৃষ্টি আসে ,নিরা আসে,আর আসে তার বৃষ্টি ভেজা অভিমান ভরা চোখগুলো,শুধু একটু আশ্রয় ছেয়েছিল সে,কিন্তু রাহুল দিতে পারেনি সেই প্রতিশ্রুতি,carrer high salary multinantional company এই শব্দগুলো তার কাছে অনেক বড় হয়ে গেছিল তার কাছে,কলকাতা ছেড়েছিল সে...
তিন
কে জানে হয়ত অভিমানেই, তার বাঙ্গালর আসার সাত মাস পরেই নীরার বিয়ে হয়ে যায় , খুব অবুঝ ছিল মেয়েটা। রাহুল তো বলেছিল সে ফিরে আসবে,হ্যাঁ সে হয়ত কথামত,রোজ ফোন করতে পারেনি ,কিতু নিরার ও তো বোঝা উচিত ছিল,”how all these big private IT companies “ নিশ্বাস ফেলার সময় নেই,তার মধ্যে আবার নাকি প্রেম,থাক,নিরা যখন তাকে ভুলে গেছে,সে ও ভুলে যাবে,অনেক সুন্দরি মেয়ের বাবা তার হাতে পায়ে ধরবে এখন তার pay packet টা দেখে,প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল তার,আর কোন খবর নেয়নি সে,কি হবে নিয়ে, যে তাকে ভুলে গেছে,তাকে সে ও মনে করতে চায় না। ভুল একদিন তার ভেঙ্গেছিল তার,পুরানো এক বন্ধুর সাথে বাঙ্গালরেই দেখা হয়েছিল তার,জানতে পেরেছিল,নিরার বিয়ে তার বাবা মা জোর করে দিয়েছিল,নিরা অনেক বাধা দেবার চেষ্টা করেছিল,কিন্ত ঐ যে এটা ভারতবর্ষ,পারেনি সে।। ইসস একবার যদি সে ফোন করত,তাহলে এটা হত না,কিন্তু নিরাও তো একবার তাকে জানাতে পারত,এই বলে সাময়িক সান্ত্বনা খুজছিল রাহুল,একবার ফোন করলে কেমন হয়,অনেক দেরি হয়ে গেছে সে যানে,কিন্তু আবার যদি সব নতুন করে শুরু করা যায়,রাহুল তো এখন well settled,সে কি পারবেনা নিরা কে আগের মতো ছিনিয়ে আনতে ,নিশ্চয়ই পারবে,পরের দিন সকালেই সে ফোন করবে তার নিরাকে ... কিন্তু সত্যি অনেকটা দেরি হয়ে গেছিল...সকালে উঠেই নিউজ পেপার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া ,তার চিরকালের অভ্যাস,তাই খুব ছোট হলেও খবরটা তার চোখ এড়ায় নি, এক নববিবাহিত বাঙালি বধূর রহস্যজনক মৃত্যু,হত্যা না আত্মহত্যা কারন টা ঠিক ধরা যায়নি,পুলিস তদন্ত করছে...নাহ এবারে আর রাহুলের ভুল হয়নি,ছবি না থাকলেও ,নাম আর ঠিকানা তাকে তার নিরার সন্ধান দিয়েছিল আবার,শেষ বারের মতো হলেও।।
চার
আঙুলের ফাকে,একটা প্রচণ্ড জ্বালা অনুভব করল সে,সিগারেট টা শেষ হয়ে এসছে,অনেক টা রাত হয়ে গেছে,এবারে শুয়ে পড়তে হবে,কাল আবার অফিস।। নাহ ঘুমাতে সে পারবেনা,হয়ত রোজকার মতো আবার ওষুধ খেতে হবে তাকে,ঘুমানোর জন্য ।পুলিশ সেদিন কারন টা ধরতে পারেনি,পারার কথাও নয়,সেটা শুধু জানত নিরা রাহুল আর হ্যাঁ এই সিগারেট টা,আবার মেঘ জমছে আকাশে,বোধহয় বৃষ্টি আসবে,আবার সেই সোঁদা গন্ধ,আবার নিরা...নাহহহ তোমার মুক্তি নেই রাহুল সেন।।
0 comments