মন

10:29

           
                      ** এক **
                        
কি মশাই, এতো ভোরে সমুদ্রের ধারে বসে কবিতা লিখছেন নাকি ??
আচমকা মহিলা কণ্ঠস্বরে অবাক হলাম , লেখায় ছেদ পড়ল,ঘুরে দেখলাম এক ২২-২৩ বছর বয়সী সুন্দরী যুবতী, আমতা আমতা করে বললাম,”আপনি কি আমাকে বলছেন “ ?
“আর কেউতো এতো ভোরে এখানে খাতা কলম নিয়ে  বসে পড়াশোনা করছেনা “, বলেই একপ্রস্থ খিলখিলিয়ে হাসি ।।

খোঁচাটা হজম করে নিলাম,সত্যি বলতে কি,খুব একটা খারাপও লাগলোনা।
এমনিতেই মেয়েদের সাথে খুব একটা কথোপকথন আমার হয় না বললেই চলে , তাই এই  সমুদ্রতটে সুন্দরী রমণী,আর বোধহয় সাহিত্যপ্রেমীও,সুযোগটা ছাড়তে পারলাম না ,হেসে বললাম-“ নানা আসলে ঠিক বুঝতে পারিনি, আপনি কি আজ সকালে এখানে এলেন “ ??

“আপনি বড্ড ন্যাকা দেখছি তো, আপনাদের ঘরে তাণ্ডবের চোটে ,সারা হোটেলের ঘুম উড়ে গেছিলো, পাশের ঘরে যে মানুষরা  বাস করে,সে খেয়াল ছিল” ??

বেশ রাগ হয়ে গেলো এবারে,গম্ভীর ভাবে বললাম,” দেখুন weekend-এ দিঘা এসে একটু বাড়াবাড়ি করাটা,মধ্যবিত্ত বাঙালীর গনতান্ত্রিক অধিকার,তবুও কালকের ঘটনার জন্য মাফ চেয়ে নিলাম,জানতাম না আপনারা পাশের ঘরেই আছেন”।।

 উত্তর এল, “কবি মশাই রেগে গেলেন নাকি,আরে চলুন চলুন চা খাওয়া যাক,এই ভোরে বালিতে বসে, সূর্যোদয় দেখতে দেখতে চা খাওয়াটা বোধহয় মানবসভ্যতার গনতান্ত্রিক অধিকার ,বাই দা ওয়ে,আমি মানসী,আমাকে মন বলেই ডাকতে পারেন“  ,আবার এক প্রস্থ খিলখিয়ে হাসি।।

এ ডাক অস্বীকার করতে পারলাম না,আমি “মন” কে অনুসরন করলাম,ভেজা বালিতে পায়ের ছাপ পড়তে লাগলো আমাদের ।।

                ** দুই  **
আমি কৌশিক ,কলকাতার এক বেসরকারি চাকুরে,দু তিন মাস অন্তর ,বন্ধুবান্ধবদের সাথে বাঙালীর “গোয়া” দিঘাতে এসে ,একটুআধটু মদ্যপান আর জমিয়ে সমুদ্রস্নানটা ,প্রায় সরকারি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছি বলতে পারেন  ।।

এবারেও তার কোণো ব্যতিক্রম হইনি,হোটেলে উঠেই আসর জমিয়ে বসেছিলাম,তবে আসরটা যে মাঝে মাঝে বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে,সেটা অস্বীকার করবনা ,কাল রাতেও বোধহয় সেটা হয়েছিল,তবে সেই বাড়াবাড়িটা যে এক নতুন স্বপ্নের স্বাদ এনে দেবে,সেটা জানতাম না।।

সকালের ঘটনাটা আগেই বলেছি আপনাদের.....................

এই ফেসবুক টুইটার এর যুগে কোনো আধুনিকা যে সাহিত্যপ্রেমী হতে পারে,বিশেষ করে কবিতাপ্রেমী হতে পারে,  সেটা মন কে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না ,

আমার ডায়রির পাতা থেকে একটা একটা করে কবিতা  সে পড়ে চলল ।
তার উদাত্ত কণ্ঠস্বর ,সমুদ্রের চাপা গর্জন  আর দূরে,  নীলে মিশে যাওয়া জেলে ডিঙ্গিগুলো,বিশ্বাস করুন এতবার দিঘা এসছি,কিন্তু দিঘার এই রুপ আগে চোখে ধরা পড়েনি ।।

“নাহ মশাই ভালোই লেখেন দেখছি আপনি ,আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে দেবেন” ,কানের পাশে হঠাৎ করে যেন beethoven symphony বেজে উঠল, মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম ,বেশ বুঝতে পারলাম, আমি চোরাবালিতে ডুবতে চলেছি  ,”মনের” কাছে মন হারিয়েছি।।

এর পরের দুটো দিন যে কিভাবে কেটে গেল,সেটার বর্ণনা দিয়ে আপনাদের আর বোর করবনা, মন এর বন্ধুদের সাথে,আমার বন্ধুরাও খুব ভালভাবে মিশে গেল,একসাথে খাওয়া-দাওয়া,গান গল্প গীটার আড্ডা,এসবের মাঝে আমি কিন্তু সেই কবিতাটা লিখে প্রস্তুত হয়ে রইলাম,কাল শেষ দিন,কালই  দেব .........।।

             ** তিন **
সকাল হতেই দৌড়ে গেলাম পাশের রুমে,নক করে ঘুম ভাঙ্গাব কিনা ভাবছি,কিন্তু কবিতাটা আজ যে মন কে দিতেই হবে,আর তো সুযোগ পাবনা নিজের মনের কথা বলার।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,এসব আকাশ পাতাল যখন ভেবে চলেছি ,হঠাৎ সেই ডাক আবার শুনতে পেলাম ,” একি কৌশিক বাবু, ওখানে কি করছেন,ঘরে ঢুকছেন না কেন” ?

দেখলাম আমার “মন” দাঁড়িয়ে আছে,এক দীর্ঘদেহি পুরুসের কাধে হাত দিয়ে ,ঘনিষ্ঠ ভাবে দাঁড়িয়ে ,আবার সে বলে উঠল ,”এদিকে আসুন না,আলাপ করিয়ে দি, এ হল সুরাজ,আমার Fiance,কি বদমাশ দেখুন,কিছু না জানিয়েই চলে এসছে,আমাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে” ।।

হাঁসতে চেষ্টা করলাম,আর হাতে ধরা কবিতার কাগজটা সবার চোখ এড়িয়ে মুড়ে ফেললাম,
নাহহ আমার কবিতাটা এবারেও শেষ করা হলনা,দূর থেকে সমুদ্রের আওয়াজ ভেসে আসছে,জেলে ডিঙ্গিগুলো বোধহয় আরও দূর থেকে বহুদূরে সরে যাচ্ছে ........................।।


** এক ** 

You Might Also Like

2 comments

  1. Smaranjit Chakraborty er lekha gulo mne pore ja6e :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. haha eta toh porom souvaggo amar,compliment hisabei nilam na hoi :)

      Delete

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images