গীটার

09:15





******************** এক ********************

“এই শুনছো, ওঠো ওঠো আর কত বেলা অবধি ঘুমাবে,বলি বাজারটা কে যাবে আনতে......আমি ??
রবিবার সকাল সকাল কানের কাছে  এত সুন্দর অ্যালার্ম,না উঠে আর উপায় আছে,উঠে পড়লাম।
বেসরকারি আইটি কর্মচারী, ম্যানেজার আর ক্লায়েন্টদের জয়েন্ট অ্যাটাকের মাঝে এই একটা দিন একটু বেঁচে ওঠার , থুড়ি ঘুমানোর সুযোগ পাই,কিন্তু ঐ যে শাস্ত্রে বলা আছে “পড়েছ কি বউ এর হাতে,ধনে প্রানে মারা পড়বে সাথে সাথে”।
বেজার মুখে বাজার করতে বেরিয়ে পড়লাম ব্যাগ নিয়ে.........।।

ফিরে এসে সবে নিউজ পেপারটা নিয়ে জমিয়ে বসেছি, এমন সময় আবার সেই অ্যালার্ম,” আজ রবিবার সেটা খেয়াল আছে,আজ কি করার কথা ছিল মনে নেই”?
পানিপথের যুদ্ধ করতে যাওয়ার কথা ছিল,ধুত্তেরি বলে উঠে পড়লাম।।
চলে গেলাম নিচের গোডাউনে,মিসেস এর নির্দেশ, পরিষ্কার করতে হবে,যা বাড়তি আবর্জনা সব আজ “টিনা-লোহা ভাঙ্গার কাছে ডেলিভারি  দিতে হবে...... ভাবছি কোনদিন নিজেকেও টিনা-লোহা ভাঙ্গায় চালান করেই দেব।।
বহুকালের ধুলো জমেছে জিনিসগুলোর  ওপরে,আরে দরজার পাসে ওটা কি দাঁড় করানো,ওটা সেই গীটারটা না??





*********************** দুই **************************
আর আধ ঘণ্টা,আর তারপরেই সেই ঘটনাটা ঘটতে চলেছে,যেটার জন্য আমি আজ চার বছর অপেক্ষা করে চলেছি, আজ শেষ সুযোগ।
কলেজের প্রথম দিন ওকে দেখেছিলাম কালো টপ আর জিন্সে , অনেক কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।
আজ এই শেষ বছরের কলেজ ফেস্ট,খুব ভাল বাজাতে না পারলেও, সিনিয়র হওয়ার সুবাদে,গিটার
নিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছি স্টেজে ,আর ঠিক করে নিয়েছি, আজ ছেলেপুলে  যতই শিয়াল ডাকুক,খিল্লি করুক,আজ বুক ঠুকে নাম নিয়ে গেয়ে দেবো ,যা হয় হবে।।
দুরু দুরু বুকে উঠে পড়লাম স্টেজে, সামনে সারি সারি উজ্জ্বল মুখ,কিন্তু অতো মুখের মধ্যেও সেই মুখটাকে চিনতে আমার ভুল হলনা , গুরু  নচিকেতাকে স্মরন করে শুরু করে দিলাম “সে প্রথম প্রেম  আমার নীলাঞ্জনা”।
গানটা কেমন হয়েছিল জানিনা,তবে হাততালি ভালই বাজছিলো,  সুযোগ টাকে কাজে লাগালাম, চিৎকার করে মনের কথা বলে উঠলাম,আর সঙ্গে সঙ্গে পিন পড়ার নিস্তব্ধতা......... that awkward moment  ,সবাই একবার আমার মুখের দিকে আর  একবার ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে.........।।


********************* তিন ************************
“বলি এই ভাঙ্গা গিটারটা হাতে নিয়ে আর কতক্ষন বসে থাকবে,কোনো কাজ যদি ঠিকঠাক টাইম মত করতে পার” !!
আবার অ্যালার্ম টা বেজে উঠলো,এই রে সত্যি তো, অনেকটা বেলা হয়ে গেছে। আসলে গিটারটা হাতে নিয়ে কলেজ লাইফে ফিরে গেছিলাম ,অনেকদিনের সঙ্গী তো,অনেক ঘটনার একমাত্র সাক্ষী,তাই এতদিনের জমে থাকা ধুলো ঝাড়তে গিয়ে, অতীতটা হঠাত করে জেগে উঠেছিল ।
ভয় হল ,যদি মিসেস অ্যালার্ম ওরফে sherlock holmes, আমার চোখের ভাষায় দুম করে নীলাঞ্জনাকে চিনে ফেলে,তাই কথা পাল্টে বলে উঠলাম "আর আধঘণ্টা ডার্লিঙ,এক্ষুনি হয়ে যাবে "।।
"আদিক্ষেতা যতসব" গুম গুম করে পা ফেলে মিসেস চলে গেলো।।   
ভাল করে টিউন করে,শেষবারের মতো আর একবার সুর তোলবার চেষ্টা করলাম,সেই গানটা ধরলাম।কিন্তু নাহ সেদিনের সুরের সাথে আজকের সুর আর  মেলাতে পারলাম না,যেমন করে সেদিনের কলেজ গেটে দাড়িয়ে থাকা নীলাঞ্জনার সাথে আজকের আমার মিসেস অ্যালার্মের কোনো মিল খুঁজে পাইনা,অথচ মানুষ দুটোই কিন্তু এক,  কে জানে হয়ত আমিও বদলে গেছি।
ঠিক  গিটারের জঙ ধরা তারগুলোর মতই  ,জীবনটাও বোধহয় ধারাবাহিকতায় ক্লান্ত হয়ে, কবেই  “টিউন” হারিয়েছে ..................।।

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images