বিরিয়ানি

23:19









** এক **

নরেশ ফেরিওয়ালা, ইঁদুর মারা বিষ বিক্রি করে পাড়াতে পাড়াতে,থুড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করে বলাই ভালো ।। আজও সে বেরিয়েছে,কিন্তু তার মনটা একদম ভালো নেই ,ছোটো ছেলেটার জন্মদিন ,বেরোনোর সময়,খুব আব্দার করে বলেছিলোঃ” আজ একটু বিরিয়ানি আনবে বাবা”?
“আনব বাবু ” ,মাথা নেড়েছিল নরেশ,আজকের দিনটায় ছেলেটার উজ্জ্বল মুখটা নিভিয়ে দিতে পারেনি সে,

কিন্তু কিভাবে,বউ এর মুখের দিকে তাকিয়েছিল নরেশ,কিন্তু না আজ আর সেখানে কোন সম্মতির চিহ্ন সে পেলনা,গয়না বন্ধক দিতে দিতে ,আর কিছুমাত্র অবশিষ্ট ছিলনা। কিছু একটা করতেই হবে আজ, ঝোলাটা কাধে ফেলে,বেরিয়ে পড়ল নরেশ।।

মিত্তির বাড়িটা সবে পেরোতে যাবে সে, এমন সময় দেখল,একটা ছেলে ছুটে বেরিয়ে এল বাড়ীর বিশাল গেটটা খুলে, তার হাতে ধরা বড় বড় প্যাকেট ,ছুঁড়ে ফেলে দিল সে সেগুলো রাস্তার ডাস্টবিনে । নাহহহ,গন্ধ চিনতে ভুল হলনা নরেশের,বিরিয়ানির অপূর্ব গন্ধ ছেড়েছে ডাস্টবিন থেকে ।।

নরেশ ফেরিওয়ালা ,কিন্তু ভিখারি নয় ...... কিন্তু সে আজ বড্ড নিরুপায়,এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ,চোরের মত কাঁপা কাঁপা পায়ে সে এগিয়ে গেল ডাস্টবিনের দিকে ।।



** দুই **

মিস্টার মিত্তির খুব বড় গর্ভমেন্ট অফিসার,মিসেস মিত্তিরও এক বেসরকারি কম্পানিতে উচ্চপদে আছেন। খুব ব্যাস্ত মানুষ দুজন,এক ছাদের তলায় থাকলেও প্রায় দেখা-সাক্ষাত নেই বললেই চলে।।

কিন্তু আজ রবিবার তাই দুজন বাড়ীতে আছেন,এমনিও আর একটা কারন ছিল,তাদের একমাত্র মেধাবি ছেলেটা স্কুলে ফার্স্ট হয়েছে,তাই সেলিব্রেট করতে হবে,তাই দোকান থেকে এসেছে প্যাকেট প্যাকেট বিরিয়ানি এবং আরও কত কি।

খাওয়ার টেবিলে বসেছেন তিনজন ,মিত্তির দম্পতি আর তাদের ছেলে,চাকর খাওয়ার পরিবেশন করতে শুরু করতে যাবে,এমন সময়,মিসেস মিত্তিরের মোবাইলটা বেজে উঠল,উঠে গেলেন তিনি,খিলখিলিয়ে হাসিতে মেতে উঠলেন তিনি,ফিরলেন ১০ মিনিট পর।। “সরি বেবি” বলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার টেবিলে যোগদান করলেন তিনি।

মোবাইলটা আবার বেজে উঠল,এবারে মিসেস এর নাহ,মিস্টার মিত্তিরের, “excuse me” বলে উঠে গেলেন তিনি। হঠাত সেই ছোটো ছেলেটা যেন পাগল হয়ে উঠল,চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বিরিয়ানির প্যাকেট গুলো নিয়ে ছুটে চললো গেটের দিকে ।।

এর পরের ঘটনা, আপনাদের আগেই জানা...............।।



** তিন **

নরেশের বাড়ীতে আজ উৎসবের পরিবেশ,ছোটো ছেলেটা খুব খুশি হয়েছে,একসাথে এতো ভালো ভালো খাবার কোনদিন তো সে দেখেনি,বউ একটু সন্দেহ করেছিল,কিন্তু নরেশ ম্যানেজ করে নিয়েছে ।।

রাত হয়ে গেছিল,নরেশ তার বাড়ির ছোটো বারান্দাটায়এসে দাঁড়িয়েছিল,বউ ছেলে ঘরে ঘুমাচ্ছে, তার মনটা আজ সত্যি খারাপ,জুটমিলের চাকরিটা যাওয়ার পর,আর কিছু না থাকলেও ফেরিওয়ালা নরেশের কিছু আদর্শ ছিল,কিন্তু আজ সে ছেলে বউকে মিথ্যে স্বপ্নের স্বাদ দিয়ে , বিক্রি করেছে নিজেকে,নিজের আদর্শকে ।।

মিত্তির বাড়ির প্রাই সব ঘরেই অনেক রাত অবধি আলো জ্বলে,ব্যাতিক্রম শুধু সেই ছোটো ছেলের ঘরটা,অন্ধকার ঘরে বিছানায় সে একা বসে আছে,তার চোখেও জল ,ঠিক নরেশ ফেরিওয়ালার মতই ............।।

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images