Frank

01:31







** এক **

দুটো শরীর পড়ে আছে ড্রেনের ধারে,ধুলো কাদা রক্ত মাখা,কিছুটা প্রানের স্পন্দন ও আছে বোধহয়।

হঠাৎ একটা শরীর উঠে দাঁড়ালো,টলতে টলতে এগিয়ে চলল অন্ধকারের দিকে ।।



** দুই **

ছেলেটার একটা ভালো নাম ছিল,সবার যেমন থাকে,সাগ্নিক। তাবে এখন সবাই “ Frank” বলেই ডাকে, frankenstine থেকে ছোটো করে “ Frank”। কারন?? কারন তার শরীরটা,বিদঘুটে লম্বা চওড়া একটা শরীর ,কুৎসিত একটা মুখ ,অনেকটা গল্পের সেই দানব frankenstine এর মত।। তবে সে দানব নয়,বাহ্যিক আবরনের অভিলাশি সমাজের মাপকাঠী তাকে আজ Frank বানিয়েছে ।।

সে শুধুই নীরবে হাসত,সমাজের “খিল্লির” বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ বলতে ছিল,ঐএক গাল হাঁসিটুকুই,চাইলে কিন্তু তার সেই দানুবে চেহারা দিয়ে সে মুখ বন্ধ করে দিতে পারত বাকিদের,কিন্তু সে তা করেনি, ছোটো থেকেই খুব শান্ত স্বভাবের ছিল সে।



** তিন **

স্কুল-এ তার আপাত বান্ধবহীন জীবনে ,বেচে থাকার অক্সিজেন বলতে ছিল রমা,একমাত্র সেই যা দু-একটা কথা বলত তার সাথে , মাঝে মাঝে সেই একমাত্র ,সাগ্নিক বলে ডাকতো তাকে।।

ধীরে ধীরে,মনে মনে বড্ড ভালবেসে ফেলেছিল সে রমাকে ,কিন্তু ঐ যে,যেখানে সে নিজে আয়নার সামনে দাঁড়াতে ঘেন্না পায়,সেখানে রমাকে কি করে সে তার মনের কথা বলবে, যদি তার একমাত্র বন্ধুটাও তাকে ছেড়ে চলে যায়,যদি অন্যদের মতো রমাও হেসে উঠে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে ওঠে “ঐ দেখ দেখ,দানবটার মানুষী খেয়াল দেখ ” ,তাই নীরবে কাদত সে।।



** চার **

সেদিন স্কুলে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল,কেমিস্ট্রি ল্যাবে হঠাত আগুন,হুড়মুড় করে বেরতে গিয়ে বিপত্তি,স্কুলে চরম বিশৃঙ্খলা।

বেরতে পারলনা একমাত্র রমা,প্রানের ভয়ে চিৎকার করতে থাকে সে,কিন্তু সেই লেলিহান অগ্নিকুণ্ডলিতে কেউ এগিয়ে যাবার সাহস দেখায়নি।

ব্যাতিক্রম শুধু “Frank”,একটা কালো লম্বা ছায়া ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভেদ করে এগিয়ে যেতে থাকে কেমিস্ট্রি ল্যাবের দিকে ,জামায় আগুন,চামড়া পুড়ছে ,সে তোয়াক্কা করলনা ।।



** পাঁচ **

স্কুল এর বারান্দাতে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সবাই,ঘিরে রয়েছে Frank আর রমাকে, Frank এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে রমা,তার চোখ বন্ধ,শরীরে সাড়া নেই,ডাক্তার এসে গেছে , থমথমে সবার মুখ,সব থেমে গেছে যেন ।।

অনেকক্ষণ পর,রমা চোখ খোলে,স্কুলটা যেন আবার হারানো জীবন ফিরে পায়,সবার মুখে হাসি, Frank এর চোখে জল।

সবার মুখে Frank এর নামে জয়ধনি,রমার চোখও কৃতজ্ঞতায় সিক্ত।

আর তখনই আসল দুর্ঘটনাটা ঘটে যায়, Frank ভুল করে বসে,এতদিন ধরে সে সবার চোখে নিজের জন্য শুধু ঘৃণা আর উপেক্ষা দেখে অভ্যস্ত,আর আজ লোকের চোখে তার জন্য সম্মান,বিশেষ করে রমার চোখে......সে ভুল করে ফেলে,আবেগের বশে ভুলে যায় বাস্তবটা, বলে ফেলে “ I love u roma,আমি তোকে খুব ভালোবাসি” ।

প্রথমে শ্মশানের নীরবতা আর তারপরেই হাসিতে ফেটে পড়ে স্কুল বাড়িটা,যেন সে অপরাধী , আঙ্গুল তুলে তার দিকে কৌতুকের ঝড় বয়ে আসে,সে দানব,মানুষকে বাঁচাতে সে পারে ঠিকই,কিন্তু তাকে ভালবাসার অধিকার সমাজ তাকে দেয়না, জলে পড়ে যাওয়া পিঁপড়ের মত, শেষ সম্বলটাকে জড়িয়ে ধরতে চায় সে,রমার চোখের দিকে তাকায় সে,কিন্তু বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাস ,সেখানেও ব্যর্থ হতে হই তাকে,রমার চোখেও কৌতুকের ঝিলিক দেখে সে,চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে পালায় সে স্কুল থেকে,অট্টহাসি গুলো তাকে তাড়া করতে থাকে।।





** ছয় **

গল্পের শুরুতে ফিরে যাই আমরা,ড্রেনের ধারে দুটো পড়ে থাকা শরীরের কথা বলেছিলাম,যে শরীর টা উঠে দাড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল,সেটা Frank এর,আর যে শরীরটা মাটিতে লুটিয়ে ,সেটা রমার।।

আমি জানিনা,এরপরে রমা বা Frank এর কি হয়েছিলো, Frank শাস্তি পেয়েছিল কিনা,রমা আবার চোখ খুলেছিল কিনা...নাহহ জানিনা,তবে এটা জানি, Frank-রা কিন্তু শুরু থেকে Frank থাকেনা,সাগ্নিক-দের প্রতিমুহুরতে গলা টিপে Frank বানিয়ে দি,আমরাই,আমাদের এই সমাজ টা ,আর তার ধরাবাঁধা অলিখিত আদিম ধ্যানধারনাগুলো...............।।

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images