হাসনুহানা
09:41** এক **
Cestrum nocturnum Night Jessamine, Lady of the Night আরো কত নামে আছে তার,তবে পাতি বাংলায় হাসনুহানা।
হাসনুহানার রাজত্ব শুরু হয় রাতের দিকে,অন্ধকার নামতে না নামতেই,মাতাল করা গন্ধে সে কথা বলা শুরু করে,নানা ভাববেন না,ফুলের বর্ণনা দেওয়ার জন্য এ গল্পের সূত্রপাত । ঠিক এই হাসনুহানার গন্ধ আমি পেয়েছিলাম ,রোজকার মত রুবি বাসস্ট্যান্ড থেকে উল্টোডাঙ্গার বাস ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি,হাল্কা বৃষ্টি পড়ছে,এমন সময় দমকা বাতাস,আর সেই হাসনুহানার গন্ধটা,অল্প আলোয় তাকিয়ে দেখলাম তাকে ,২৪-২৫ বছর বয়সী আধুনিক পোশাকে সুসজ্জিতা এক তরুণী।।
ওকি হাসছেন নাকি? ভাবছেন একটা মেয়ের গা থেকে হাসনুহানা
আপনি অস্বীকার করতে পারেনকি? ছোটবেলায় যখন জ্বরে আপনি বেহুস হয়ে পড়ে আছেন, আপনার নাকে একটা গন্ধ এল,ঘোরে থাকলেও,আপনি ঠিক বুঝে গেলেন আপনার মা আপনার কাছে এসে বসেছে,এবারে ঠিক জ্বর সেরে যাবে ,আর ভয় নেই।।
কিম্বা বিয়ে করা নতুন বউ এর গন্ধ তো সর্ববিদিত,চারিদিকে মম করে যেন, বাড়ীতে উতসবের পরিবেশ,রঙিন আলোতে নয়, ঐ গন্ধে বেশী ধরা দেয় , অস্বীকার করতে পারেনকি?
আপনি কলেজে সবার সাথে সিনেমা দেখতে গেছেন,সবাই ব্যাস্ত সিনেমা দেখায়,কিন্তু আপনার মন চঞ্চল,আপনার নাকে কিন্তু সেই না বলতে পারা পাসে বসা Crush এর গন্ধটাই ভেসে আসছে,আপনি বুঝতে পারছেন,উচিত হচ্ছেনা ব্যাপারটা,তবুও আপনি বুক ভরে আর একবার নিশ্বাস নিয়ে নিলেন,কেয়া পাতা কাল হো, ইয়া না হো।।
** দুই **
বিশ্বাস করুন মনে কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলনা,কিন্তু সেই গন্ধটা যেন নেশা হয়ে দাঁড়ালো,রোজ কাজ সেরে ঠিক ৯ টায় বাসস্ট্যান্ড,আর অন্তহীন অপেক্ষা,কখন সে আসবে।
সে আসতো,একই বাসে উঠতাম আমরা ,ফাঁকা বাস,ইচ্ছে করেই তার পেছনের সিট টায় বসতাম আমি,আর বুক ভরে টেনে নিতাম হাসনুহানাকে ।।
একদিন বোধহয় সে টের পেল,অপ্রস্তুত আমি,কিন্তু সে ঘুরে মুচকি হাসল। দুর্ভাবনা কেটে গেল আমার,আস্তে আস্তে রোজ কথা বলা আরম্ভ হল,বেশী কিছু না,”এই কি গরম পড়েছে”,”কি বৃষ্টিটাই না হচ্ছে বলুন” । হতে পারে অত্যন্ত অল্প,কিন্তু শুরুটাতো হল। এটাই বা কম কি,আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, বিশ্বাস করুন,গন্ধের মাত্রা টা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগল যেন।।
** তিন **
সেদিন অফিস থেকে বেরতে খুব দেরি হয়ে গেছিল,বসের মেজাজ টা শ্রাবনের মেঘের মতই গর্জাচ্ছিল ঘনঘন ,সব কাজ মিটিয়ে বাসস্ট্যান্ড যখন এলাম,রাত তখন ১০.৩০,মুসল ধারে ঘণ্টা তিনেক বৃষ্টি হয়ে গেছে আগে,বাস নেই,রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা।
মনটা খারাপ হয়ে গেল,জোর গালাগাল করতে লাগলাম বস কে,ব্যাটার জন্য আজ গন্ধটা পাওয়া হলনা,কে বলতে পারে হয়ত,এই বৃষ্টি ভেজা সোঁদা হাওয়াতে আজ কথা হয়তো অনেকটা বাড়ত।।
হটাত দূরে একটা খিলখিলিয়ে নারী কণ্ঠ শুনতে পেলাম,গলা চিনতে আমার ভুল হলনা,হা এত সেই আমার হাসনুহানাই,মনটা আনন্দে নেচে উঠল,ভগবান কে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে ভাবলাম্ ,আজ মনের কথাটা পেড়েই বসব,কপালে যা আছে হবে।।
কিন্তু ওটা কি,হাসনুহানার সঙ্গে আরও দুটো ছেলে যে,
“আজ কিন্তু যেতেই হবে আমাদের সাথে ডারলিং,আজ আর কোন কথা শুনছি না,ঝড় বাদলের রাত,আজ আর তোমাকে ছাড়ছি না”।
মেয়েলি কণ্ঠের উত্তর এলঃ “যেতে আমার আপত্তি নেই গো,যাওয়ার জন্যই তো এসেছি,আজ যা বৃষ্টি এল,আমি তো ভাবলাম আজ আর মা লক্ষ্মীর দেখা পাবনা ,তোমরা এলে ভালই হল,হাজার হোক চেনা লোক তো ,তবে দুজন কিন্তু এক্সট্রা চার্জ” বলেই আবার খিলখিলিয়ে দামাল হাসি।।
বাস এর হর্ন এর শব্দে আমার চমকটা ভাঙল,নিজের মনে হেসে উঠলাম খানিকটা,বাসটায় উঠে পড়তে হবে,আবার বৃষ্টি আসছে।। বাসের পাদানিতে পা দিয়ে ,শেসবারের মতো বুক ভরে নিশ্বাস নিলাম আর একবার,নাহহহ আর ফিরে পেলাম না,হাসনুহানার গন্ধটা কোথায় হারিয়ে গেছে যেন.............
2 comments
ভালো
ReplyDeleteভালো
ReplyDelete